শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৮ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:
মোদির নেতৃত্বে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর দেশ ভারতে মুসলিম নিপীড়ন বেড়েছে। গুজরাটের দাঙ্গা, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপ, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাসের পর গত বছর দিল্লির দাঙ্গাতেও বড় ভুক্তভোগী ধরা হয় মুসলিমদের। তবে ইসলাম যে শান্তি ধর্ম, তা আবারও প্রমাণ করছেন ভারতীয় মুসলিমরা। করোনা রোগীদের জন্য মসজিদের দরজা খুলে দিয়েছেন তারা। সেগুলো হয়ে উঠছে একেকটি অস্থায়ী হাসপাতাল, যেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ।
ভারতে প্রায় প্রতিদিনই তিন লক্ষাধিক মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। দৈনিক মুত্যুর সংখ্যাও ছাড়িয়েছে তিন হাজারের বেশি। ইতোমধ্যে করোনায় দুই লাখ প্রাণহানির ভয়ঙ্কর মাইলফলক পেরিয়ে গেছে দেশটি। সেখানকার হাসপাতালগুলোতে তিলধারণের জায়গা নেই। এ পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলেছে অক্সিজেনের চরম সংকট। এমন অবস্থায় ভারতের বেশ কয়েকটি বড় বড় মসজিদ করোনার চিকিৎসাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে গুজরাটের ভাদোদারা শহরের জাহাঙ্গীরপুরা মসজিদের নাম উল্লেখযোগ্য। এটিকে সম্প্রতি ৫০ শয্যার হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়েছে।
হাসপাতালটির ট্রাস্টি ইরফান শেখ আরব নিউজকে বলেন, শহরের করোনা পরিস্থিতি ভালো নয়, মানুষ হাসপাতালে শয্যা পাচ্ছে না। তাই তাদের স্বস্তি দিতে আমরা মসজিদ খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বলেন, মসজিদ খুলে দেয়ার কয়েক দিনের মধ্যে ৫০ শয্যাই পূরণ হয়ে যায়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, হাসপাতালগুলো কী পরিমাণ চাপে রয়েছে। ইরফান জানান, অক্সিজেন পেতে তাদের সমস্যা হচ্ছে। তবে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ পেলে মসজিদে আরও ৫০টি শয্যা বসানো সম্ভব।
নরেন্দ্র মোদির জন্মস্থান গুজরাট ভারতের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ করোনায় আক্রান্ত রাজ্য। মঙ্গলবারও সেখানে দেড় হাজার নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, মারা গেছে অন্তত ১৫০ জন। জাহাঙ্গীরপুরার মতো সেখানকার দারুল উলুম মসজিদকেও করোনা হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়েছে। এতে শয্যা রয়েছে ১৪২টি। সেখানে ২০ জন নার্স ও তিনজন চিকিৎসক সার্বক্ষণিক করোনা রোগীদের সেবা দিয়ে চলেছেন।
মসজিদটির পরিচালনা কমিটির সদস্য আশফাক মালেক তন্দলজা বলেন, আমরা এক হাজার শয্যার হাসপাতাল বানাতে পারি, তবে অক্সিজেন সরবরাহ কম। এসব মসজিদ মুসলিমপ্রধান এলাকায় হলেও সেখানে চিকিৎসা নিতে আসছেন সব ধর্মের মানুষই। এ বিষয়ে ইরফান শেখ বলেন, আমাদের কেন্দ্রে ৫০ শয্যার ১৫টিতেই অমুসলিম রয়েছেন। আমরা মানবতার সেবা করি, ধর্মের নয়।
অথচ ২০০২ সালে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া অন্যতম শহর এই ভাদোদারা। এটিসহ গুজরাটের বিভিন্ন শহরে কয়েকদিন ধরে চলেছিল সেই দাঙ্গা। এতে প্রাণ হারান কয়েক হাজার মানুষ, যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। ইরফান বলেন, মানবতা কোনও ধর্ম বোঝে না। সাধারণ মানুষ একে অপরকে বোঝে এবং শান্তিতে থাকতে চায়। সূত্র: মিডল ইস্ট মনিটর।